জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পরও নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়নি—এমনটাই মনে করছেন আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী এবং অংশগ্রহণকারী নারীরা। তাঁদের অভিযোগ, এখনো রাজনীতিতে নারীদের উপস্থিতি কেবল প্রতীকীভাবে মেনে নেওয়া হয়, মতামত ও মেধার মূল্য দেওয়া হয় না। বরং সামাজিক ও ডিজিটাল মাধ্যমে অবমাননার শিকার হতে হয় তাঁদের।
সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই উইমেনস ডে শিরোনামের এক বিশেষ আয়োজনে এসব অভিযোগ করেন আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা। আয়োজনে গান, চলচ্চিত্র, স্মৃতিচারণা ও ড্রোন শোর মাধ্যমে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানকে স্মরণ করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুথানের স্মৃতিচারণা করেন আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীরা। এ সময় নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেন তাঁরা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক ও এনসিপি নেত্রী নুসরাত তাবাসসুম বলেন, চব্বিশের আগেও রাজনীতি করা নারীদের যে চোখে দেখা হতো, এখনো সেই চোখে দেখা হয়। জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নারীদের ‘পলিটিক্যাল মেয়ে’ বলে আগের সরকারের আমলে ছোট করা হতো, এখনো তা করা হচ্ছে।
নুসরাত তাবাসসুম বলেন, রাজনীতিতে নারীদের শুধু মিছিলে, আন্দোলনে, ক্যামেরার সামনে দেখানোর জন্য আনা হয়। তাঁদের মেধার, তাঁদের মতামতের কোনো দাম নেই। তিনি বলেন, ‘নারীদের কথা বলার লোকও নারীরা, শ্রোতাও নারীরা, এ রকমটা তাঁরা চান না।’
এ সময় জুলাই–পরবর্তী সময়ে যেসব নারী ধর্ষিত হয়েছেন, তাঁদের কথা তুলে ধরে জুলাই আন্দোলনে আহত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, যে গোষ্ঠী বেগম রোকেয়া, ইলা মিত্র, প্রীতিলতাকে লাঞ্ছিত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আঙুল তোলার জন্য তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন। এসব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, দেশের সংগ্রামী নারীরা এখনো হাল ছেড়ে দেননি। যে নারীরা পুলিশের গুলির সামনে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের লাঞ্ছিত করে, অপমান করে দমানো যাবে না।
জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফসিন মেহনাজ বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায় রয়েছে আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারীদের কাঁধে। তাই কারও কটাক্ষ, গালি ও নেতিবাচক মন্তব্যকে আমলে নিয়ে পিছু হটা যাবে না। মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে থেকে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠানটি। শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে। এরপর মঞ্চে প্রদর্শিত হয় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রযোজিত তথ্যচিত্র জুলাই উইমেন।